শ্রীশ্রীঠাকুর-
চাকরী হ'ল subservient service (পরনির্ভরশীল আজ্ঞানুবর্তী সেবা)। তার মানে আরেকজন আমার ভভরণপোষণের দায়িত্ব নিবে আর তার বিনিময়ে আমি তার হুকুম তামিল করে যাব। খাটতে আমি রাজি আছি কিন্তু নিজের মাথা খাটিয়ে দায়িত্ব ও ঝুঁকি নিয়ে কিছু করার ঝামেলা পোহাতে রাজী নই। একজন যতই efficient ( দক্ষ ) হোক না কেন, যদি সে স্বাধীন ও সদ্ভাবে জীবিকা অর্জ্জন করার যোগ্যতা অর্জ্জন না করে, তাহলে তার আত্মপ্রত্যয়ও গজায় না, ফলে ভয় ও দুর্বলতাও যায় না। সাধারণত একটা চাকর service ( সেবা ) দেয় not for the man, but for the money ( নিয়োগকর্তা মানুষটির জন্য নয়, তার অর্থের জন্য )। এই বুদ্ধি ভাল নয়। মানুষ অর্থস্বার্থী না হয়ে সেবাস্বার্থী ও লোকস্বার্থী হয়ে যদি চলে, তাতে তার নিজেরও মঙ্গল হয়, পরিবেশেরও মঙ্গল হয়। এতে dishonesty ( অসাধুতা ) মাথা তু্লা দিতে পারে না। কেউ যদি চাকরীই করে আর সে যদি তার মনিবকে সদ্ভাবে লাভবান করে সে নিজে লাভবান হতে চায় সেটা কিন্তু মন্দের ভাল। সেখানে সে শুধু অর্থস্বার্থী নয়, মানুষস্বার্থীও বটে। চাকরীর থেকে ব্যবসায় ভাল। কিন্তু ব্যবসাদার যে, সেও যদি মানুষস্বার্থী না হয়ে দাঁ মেরে টাকা করার ফন্দী আঁটে, তাহলে ব্যবসায়ের তাৎপর্য্য নষ্ট হয় এবং ব্যবসাও বেশি দিন টেকে না।

শ্রীশ্রীঠাকুর একটু থেমে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর আপনমনে আবার বললেন -- সবচাইতে জবর জিনিস হল nurturing service (পোষণী সেবা )। একজন হয়তো একটা বাগান করল। ভাল করে তদবির করল। প্রত্যেকটি গাছে সার দিল, জল দিল। গাছগুলি বড় হল, ফল ধরল। ফল পেকে পড়ে গেল। তখন সেই ফল কুড়িয়ে নিয়ে অন্যকে দিল, নিজেও খেল। তার বীচিটা আবার পুঁতে দিল। আবার গাছ হল। গাছের যত্ন নিয়ে থাকল। গাছগুলি পুষ্ট হয়ে উঠুক তাজা হয়ে উঠুক, এই দেখেই সে খুশি, এই তার মস্ত আত্মপ্রসাদ। নিজের গাছের ফল, অথচ নিজে হয়তে অনেক সময় খায় না, পাঁচজনকে বিলিয়ে দেয়। তবু বাগানের পিছনে পয়সা ঢালে, কত পরিশ্রম করে। গাছগুলিকে লালন পালন করাই যেন তার নেশা। একেই বলে nurturing service ( পোষণী সেবা )। অনেকে গরুর জন্য অমন করে। কেমন যেন একটা অকারণ টান। মানুষ ছেলেপেলের জন্য কতখানি inquisitiveness ( অনুসন্ধিৎসা ) নিয়ে করে। তারা বড় হলে, সুখী হলেই খুশী। বিশেষ কোন স্বার্থ-প্রত্যাশা রাখে না। তবে আমি আমার ছেলেপেলের interest ( স্বার্থ ), এইটুকু বোধ করতে পারলে বাপের মনে আনন্দ ধরে না। আমি ignored ( উপেক্ষিত ), এ-কথা Love ( ভালবাসা ) বোধহয় সইতে পারে না। ছেলের টাকা হলে বাপে যে পাবে, তা নয়, তার যদি নাম হয়, বাপের নিজের খ্যাতি তাতে হয়তো বাড়ে না, সে ভালটা খেলে তার খাওয়া হয় না, তবু তাতেই তার সুখ। মানুষ নিজে কত কষ্টট করে কিন্তু ভাবে ছেলেপেলেদের গায় যেন কাঁটার আঁচড়টাও না লাগে। বাপে যে ছেলের জন্য এত কিছু করে, তা কিন্তু ছেলে ভাল করে অনুভব ও উপভোগ করতে পারে না যদি সে ভালবেসে বাপের জন্য কিছু না করে।
আলোচনা প্রসঙ্গে - ১১দশ খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৭৩/১৭৪
x

শ্রীশ্রীঠাকুর একটু থেমে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর আপনমনে আবার বললেন -- সবচাইতে জবর জিনিস হল nurturing service (পোষণী সেবা )। একজন হয়তো একটা বাগান করল। ভাল করে তদবির করল। প্রত্যেকটি গাছে সার দিল, জল দিল। গাছগুলি বড় হল, ফল ধরল। ফল পেকে পড়ে গেল। তখন সেই ফল কুড়িয়ে নিয়ে অন্যকে দিল, নিজেও খেল। তার বীচিটা আবার পুঁতে দিল। আবার গাছ হল। গাছের যত্ন নিয়ে থাকল। গাছগুলি পুষ্ট হয়ে উঠুক তাজা হয়ে উঠুক, এই দেখেই সে খুশি, এই তার মস্ত আত্মপ্রসাদ। নিজের গাছের ফল, অথচ নিজে হয়তে অনেক সময় খায় না, পাঁচজনকে বিলিয়ে দেয়। তবু বাগানের পিছনে পয়সা ঢালে, কত পরিশ্রম করে। গাছগুলিকে লালন পালন করাই যেন তার নেশা। একেই বলে nurturing service ( পোষণী সেবা )। অনেকে গরুর জন্য অমন করে। কেমন যেন একটা অকারণ টান। মানুষ ছেলেপেলের জন্য কতখানি inquisitiveness ( অনুসন্ধিৎসা ) নিয়ে করে। তারা বড় হলে, সুখী হলেই খুশী। বিশেষ কোন স্বার্থ-প্রত্যাশা রাখে না। তবে আমি আমার ছেলেপেলের interest ( স্বার্থ ), এইটুকু বোধ করতে পারলে বাপের মনে আনন্দ ধরে না। আমি ignored ( উপেক্ষিত ), এ-কথা Love ( ভালবাসা ) বোধহয় সইতে পারে না। ছেলের টাকা হলে বাপে যে পাবে, তা নয়, তার যদি নাম হয়, বাপের নিজের খ্যাতি তাতে হয়তো বাড়ে না, সে ভালটা খেলে তার খাওয়া হয় না, তবু তাতেই তার সুখ। মানুষ নিজে কত কষ্টট করে কিন্তু ভাবে ছেলেপেলেদের গায় যেন কাঁটার আঁচড়টাও না লাগে। বাপে যে ছেলের জন্য এত কিছু করে, তা কিন্তু ছেলে ভাল করে অনুভব ও উপভোগ করতে পারে না যদি সে ভালবেসে বাপের জন্য কিছু না করে।
আলোচনা প্রসঙ্গে - ১১দশ খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৭৩/১৭৪
x
Comments
Post a Comment